সন্তান প্রতিপালন করা মুসলিম মহিলাদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। আমরা সবাই সন্তান চাই, সন্তানকে ভালবাসি। তারা আমাদের হৃদয়ের আনন্দ। কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে সন্তান হল দুনিয়াতে এবং আখেরাতে আল্লাহর সন্তুষ্টি পাওয়ার মাধ্যম। কিন্তু এই সন্তুষ্টি যদি না পাই তবে দুনিয়াতে সন্তানদের নিয়ে আনন্দে জীবন কাটানোর মধ্যে কোন লাভ নেই। মুসলিম বাবা মা হিসেবে আমাদের মনোভাব কেমন হওয়া উচিৎ সেটা সুরা মারিয়াম থেকে বিস্তারিত জানতে পারবো এবং সুসন্তান লাভের দোয়া গুলো পড়বো। মায়ের সাথে সন্তানের ঘনিষ্ঠতা সবচেয়ে বেশি। আল্লাহ মাকে সেই ধরনের আবেগ, অনুভূতি এবং ধৈর্য্য দিয়ে তৈরি করেছেন যাতে সে সন্তানকে বড় করে তুলতে পারেন। বাবার পক্ষে কিন্ত এতটা ধৈর্য্য রাখা সম্ভব নয়। মা যেভাবে একটা বাচ্চাকে বড় করে তুলেন সেটা আল্লাহ্ বিশেষ ভাবে মায়ের মধ্যে দিয়ে দিয়েছেন। সন্তানের সুস্থ এবং পরিপূর্ণ মানসিক বিকাশের জন্য যা কিছু দরকার সেটা একজন মায়ের জন্য যতটুকু সম্ভব যতটুকু সহজ ততটুকু কিন্তু আর কারো জন্যই নয়। সে জন্য মায়ের দায়িত্ব অনেক বেশি। সন্তানকে সুস্থ ভাবে বড় করে তুলতে হবে। সন্তান লালন-পালনের জন্য সবধরনের দিক নির্দেশনা আমরা কোরআন এবং সুন্নাহ্ থেকে পাই। বর্তমানে এগুলো নিয়ে অনেক গবেষণা হচ্ছে এবং এ থেকে যে ফলাফল পাওয়া যাচ্ছে তা কোরআন এবং সুন্নাহ্তেই আছে। কিছু কিছু অমিলও আছে। কিন্তু মুসলিম হিসেবে কোরআন এবং সুন্নাহ র সাথে যতটুকু মিল ততটুকুই আমরা গ্রহণ করবো আর যতটুকু অমিল সেটুকু বর্জন করবো। এখানে আমার মনে হয়, আমার অভিজ্ঞতা, আমার বাবা মায়ের অভিজ্ঞতা, অন্যের অভিজ্ঞতা এসবের কোন স্থান নেই।
সন্তান প্রতিপালনের জন্য কুরআন এবং হাদিসে অনেক দিক নির্দেশনা রয়েছে। এখানে কয়েকটি তুলে ধরা হলো
হে ইমানদারগণ [১] ! তোমারা নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে রক্ষা কর আগুন থেকে [২], যার ইন্ধন হবে মানুষ এবং পাথর, যাতে নিয়োজিত আছে নির্মম, কঠোরস্বভাব ফেরেশতাগণ, যারা অমান্য করে না তা, যা আল্লাহ তাদেরকে আদেশ করেন। আর তারা যা করতে আদেশপ্ৰাপ্ত হয় তা-ই করে।
(সুরাঃ আত তাহরিম, আয়াত নং ৬)
উপরের আয়াতে আগে নিজেকে এবং পরে পরিবারকে আগুনে থেকে রক্ষা করতে বলা হয়েছে।
“তোমরা প্রত্যেকেই রাখাল বা দায়িত্বশীল এবং প্রত্যেককেই তার অধীনস্ত লোকদের সম্পর্কে জবাবদিহি করতে হবে। শাসকও রাখাল বা দায়িত্বশীল, তাকে তার অধীনস্ত লোকদের ব্যাপারে জবাবদিহি করতে হবে। নারী তার স্বামীর বাড়ী এবং তার সন্তান-সন্ততির তত্ত্বাবধায়িকা, তাকে তাদের ব্যাপারে জবাবদিহি করতে হবে।” [বুখারী: ৮৯৩, ৫১৮৮]
উপরের হাদিস অনুযায়ী একজন পুরুষ হচ্ছে তার ঘরের রাখাল বা অভিভাবক। ঘরের স্ত্রী থেকে শুরু করে ছেলে-মেয়ে এবং পরিবারের অধিনস্থ যারা আছে তাদের সকলেরই দায়-দায়িত্ব তার। তারপরই বলা হচ্ছে একজন স্ত্রী কথা যিনি হচ্ছেন ঘরের কর্ত্রী। তার অধিনে ছেলে-মেয়ে থেকে শুরু করে কোন আত্মীয়-স্বজন যদি থাকে তারা অথবা যারা গৃহকর্মী থাকেন প্রত্যেকের ব্যাপারে তিনি দ্বায়িত্বশীল এবং জিজ্ঞাসিত হবেন। এখানে বুঝতে হবে একজন মা তার সন্তাদের ব্যাপারে দায়িত্ব প্রাপ্ত এবং দায়িত্বশীল। তাকে জিজ্ঞেস করা হবে তিনি তার দায়িত্ব যথাযথ ভাবে পালন করেছেন কিনা। অথাৎ আল্লাহর পথে ঠিক মত পরিচালনা করার জন্য যথাযথ চেষ্টা করেছন কিনা। আমরা শুধু চেষ্টাই করতে পারি। আমরা কাউকে সঠিক পথে নিয়ে আসতে পারবো তা কিন্তু নয়। সেটা আল্লাহ্ চাইলে আনবেন না চাইলে আনবেন না। কিন্তু চেষ্টা আমাদের করতে হবে।
নায়লা নুযহাত