বাবা-মায়ের সঠিক জ্ঞানের অভাবে সন্তানদের যে শারীরিক এবং মানসিক ক্ষতি গুলো হয়-
সন্তানের সাথে উত্তম আচরণের হাদীস গুলো –
- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আয়েশা রা. কে বলেন, হে আয়েশা! তুমি কোমল হও, বন্ধুভাবাপন্ন হও। কারণ আল্লাহ যদি কোনো পরিবারের কল্যাণ চান তাহলে তাদেরকে কোমলতা ও বন্ধুভাবাপন্নতা দান করেন। (সহীহুত তারগীব- ৩/১১, মুসনাদে আহমদ- ৬/১০৪, ১১২)
- নো’মান ইবনু বাশীর রা. বলেন, তার পিতা তাকে নিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বলেন, আমি আমার ছেলেকে একটি খাদেম দান করেছি। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমার সকল সন্তানকেই কি তুমি এরুপ দান করেছো? তিনি বলেন, না। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, এটি ফিরিয়ে নাও। (সহীহ মুসলিম- ৩/১২৪১-৪২)
- আবু হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা হাসান ইবনু ‘আলীকে চুম্বন করেন। সে সময় তাঁর নিকট আকরা‘ ইবনু হাবিস তামীমী উপবিষ্ট ছিলেন। আকরা‘ ইবনু হাবিস বললেনঃ আমার দশটি পুত্র আছে, আমি তাদের কাউকেই কোন দিন চুম্বন দেইনি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর পানে তাকালেন, অতঃপর বললেনঃ যে দয়া করে না, সে দয়া পায় না। [সহীহ বুখারী: ৫৯৯৭, মুসলিম ৪৩/১৫, হাঃ ২৩১৮, আহমাদ ৭২৯৩] (আধুনিক প্রকাশনী- ৫৫৬২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪৫৮)
- রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ বিষয়ে বিশেষভাবে সতর্ক করে বলেছেন, ‘তোমরা আল্লাহ্কে ভয় করো এবং তোমাদের সন্তানদের মাঝে ইনসাফ করো’। [সহীহ বুখারী: ২৫৮৭]
- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “তোমাদের কেউ তার খাদেমকে শাসন করলে সে যেন তার মুখমন্ডলে আঘাত না করে।” (আল আদাবুল মুফরাদ- ৯২/১৭৩)
- অতএব যেমনি ভাবে খাদেমদেরকে শাসনকালে মুখমন্ডলে আঘাত করতে কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে, তেমনি নিজ সন্তানদেরকেও শাসনকালে তাদের মুখমন্ডলে কোনো অবস্থাতে আঘাত (চড়, থাপ্পর মারা) করা নিষেধ।
- আনাস রা. বলেন, সন্তান-সন্ততি ও পরিবারের সদস্যদের প্রতি স্নেহ, দয়া ও মমতা করার ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চেয়ে বেশী কাউকে আমি দেখিনি। (সহীহ মুসলিম- ৪/১৮০৮)
গত পর্বে আমরা জেনেছি যে বাবা-মা এবং অন্যান্য আত্মীয়-স্বজন যখন ছোট থেকেই একটি বাচ্চার সাথে একটা সুষ্ঠ যোগাযোগ স্থাপন করে তখন বাচ্চার মস্তিষ্কের গঠন ভাল হয়। সে শারীরিক এবং মানসিক ভাবে দৃঢ় হয়। আর যদি সেটা না হয় তবে তার স্বাভাবিক বিকাশে নেতিবাচক প্রভাব পরে। সেটা কারো ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক ও কারো ক্ষেত্রে পরবর্তীতে সুদূরপ্রসারী নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে দেখা গিয়েছে। প্রতিনিয়ত বাবা-মায়ের তুমুল ঝগড়া, দ্বন্দ্ব, সন্তানের সাথে খারাপ ব্যবহার, মানসিক ভাবে কষ্ট দেয়া, সন্তানকে অবহেলা করা, সন্তানদের মাঝে সমতা রক্ষা না করা এবং যে কোন কিছু নিয়ে তুলনা করা, ছোট করে কথা বলা, পড়ালেখার অতিরিক্ত চাপ, রেজাল্ট নিয়ে বন্ধুদের অথবা অন্য কারো সাথে তুলনা, অতি প্রতিযোগিতাপূর্ণ মনোভাব, কখনোই তার মতামতকে গ্রাহ্য না করা, অতিরিক্ত পড়ার প্রেশার দিয়ে তাদের কাছ থেকে শৈশব, হালাল বিনোদন (খেলা-ধুলা, বই পড়া ইত্যাদি) কেড়ে নেয়া যেগুলো কিনা ওদের শারীরিক এবং মানসিক বিকাশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ( তবে হারাম এবং ক্ষতিকর বিনোদন যেমন- গ্যাজেট, হারাম ভিডিও গেম, ইউটিউব, টিকটক, লাইকি, সোশ্যাল মিডিয়া ইত্যাদি সহ আরো অনেক কিছু দিতে খুবই উৎসাহ বোধ করতে দেখা যায় এবং এর জন্য সুযোগও করে দেয়া হয়, যে গুলো কিনা ওদের ধ্বংসের উপাদান), কারো দ্বারা সেক্সচুয়ালি এবিউজ হওয়া, নিজেদের মতামত গুলো তাদের উপর চাপিয়ে দেয়া, তারা নিতে পারছে কিনা, তাদের ভাল লাগছে কি না সেটা খেয়াল না করা। অথচ ভাল না লাগলে মন থেকে নিতে না পারলে পরবর্তীতে তাদের বিপথগামীতার কারন হয়ে যেতে পারে এবং সেটা থেকে তাদের একটি বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হতে পারে এটা কিন্তু ভেবে দেখা হয় না।
এর প্রতিফলন আমরা চারিদিকে দেখতে পাই । আপাততঃ দৃষ্টিতে মনে হয় সন্তান তো ভালই আছে পড়াশোনা করছে, পরীক্ষায় ভাল রেজাল্ট করছে, উচ্চ পর্যায় কর্মরত আছে। বেশিরভাগ বাবা-মায়েদের এই বিষয়টা নিয়ে সঠিক ধারণা না থাকায় সন্তানদের ভোগান্তি অনেক বেশি হয়ে থাকে। শিশুর শৈশবে ঘটে যাওয়া সেই স্মৃতি বা এক গুচ্ছ কল্পনা যা তার শারীরিক বা মানসিক বা উভয় ক্ষেত্রেই স্বাভাবিক জীবনযাপনে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। অনেক ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে যে শৈশবের ঘটে যাওয়া ঘটনাকে কেন্দ্র করে মানুষ আত্মহত্যার পথ বেঁছে নেয়। এছাড়া নিজেদের সংসার জীবনেও অসুখী হয়। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশী ভুক্তভোগী হয় তার চারপাশে যারা থাকে বিশেষ করে স্বামী/স্ত্রী, সন্তান । তাইতো চারিদিকে এতো অত্যাচারী স্বামী/স্ত্রীদের সম্পর্কে অভিযোগ শোনা যায়।
এছাড়াও অল্প বয়েসেই বিভিন্ন শারীরিক এবং মানসিক রোগ (হাঁপানি, করোনারি হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, স্ট্রোক, বিষণ্ণতা, অ্যাংজাইটি ইত্যাদি ) দেখা দেয়।
নায়লা নুযহাত