সন্তান প্রতিপালন-৩

একজন মায়ের প্রভাব

আবু হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, “এক লোক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে জিজ্ঞেস করলঃ হে আল্লাহর রাসূল! আমার নিকট কে উত্তম ব্যবহার পাওয়ার অধিক হকদার? তিনি বললেনঃ তোমার মা। লোকটি বললঃ অতঃপর কে? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমার মা। সে বললঃ অতঃপর কে? তিনি বললেন, তোমার মা। সে বললঃ অতঃপর কে? তিনি বললেনঃ অতঃপর তোমার বাবা।” – বুখারী – ৫৯৭১

ইবনু শুবরুমাহ বলেন, ইয়াহইয়া ইবনু আইউব আবূ যুর‘আ থেকে এ রকমই বর্ণনা করেছেন।[মুসলিম ৪৫/১, হাঃ ২৫৪৮] (আধুনিক প্রকাশনী- ৫৫৩৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪৩৩)

একটি শিশু জিন গত ভাবে বাবা-মা থেকে অনেক বৈশিষ্ট্য পায় এবং পরিবেশ থেকে কিছুটা পায়। যার কাছে বাচ্চা বড় হয় অর্থাৎ যে পরিচর্যা করে তার অনেক কিছুই বাচ্চা গ্রহণ করে। সুতরাং এভাবে যদি আমরা দেখি যে একজন মা বাচ্চার পরিচর্যার দায়িত্বটাও নেয় তাহলে বাচ্চাটি সম্পূর্ণভাবে মায়ের কাছ থেকে বেশীর ভাগই শিক্ষা পেয়ে যাচ্ছে। এর জন্যই উপরের হাদীসে উত্তম ব্যবহার পাওয়ার অধিক হকদার হিসেবে মায়ের কথা ৩ বার বলা হয়েছে। এই অধিকার শুধু জন্ম দিয়ে কোন মতে সন্তান লালন-পালন করা মাধ্যমে পায় না। এটা পায় একটা মায়ের সন্তানের জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম এবং আল্লাহর রাস্তায় পরিচালনা করার যথাসাধ্য চেষ্টার মাধ্যমে।

বাচ্চার জন্য আমাদের সব সময়ই উপস্থিত থাকতে হবে। উপস্থিত বলতে যখনই তার প্রয়োজন হয় তখনই আমরা তার পাশে আছি। এরকম একটা বোধ বাচ্চার হতে হবে এবং আমাদেরও সেই বোধটা থাকতে হবে। বাচ্চারা কিন্তু বাবা মাকে মিস করে। যখন বাচ্চাকে যথেষ্ট পরিমানে সময় দেবো না তখন তারা অনেকটা সময় একা থাকবে এবং মানসিক ভাবে একাকিত্ব বোধ করবে। এটা কিন্তু ইসলামে বাচ্চাকে যে ভাবে বড় করার কথা বলা হয়েছে তার সাথে যায় না। অবশ্যই আমাদের নিজেদের কাজ থাকবে। নিজেদের জন্য সময় আমরা বের করে নিবো। কিন্তু বাচ্চাকে বঞ্চিত করে নয়। একটা বাচ্চা সব সময়ই তার বাবা মাকে কাছে চাইবে বা তার আপনজন তাদেরকে কাছে চাইবে এই কথাটা আমাদের মাথায় রাখতে হবে। একজন বাচ্চা কিন্তু জন্মের পর থেকেই যত বেশী তার মাকে কাছে পাবে, মায়ের সাথে গভীর সম্পর্ক তৈরী হবে তত কিন্তু তার মস্তিষ্কের গঠন ভাল হবে। মা বাবা এবং অন্যান্য আত্মীয় স্বজন যখন তার সাথে ছোট থেকেই একটা যোগাযোগ স্থাপন করবে তখন তাদের মধ্যে সম্পর্কটা ধীরে ধীরে সুন্দর হবে এবং সুন্দর ভাবে তৈরি হবে। প্রথম ৫ বছরে বাচ্চার মস্তিষ্কের নিউরন এবং সিনাপটিক নেটওয়ার্ক গুলো গঠন ( একটির সাথে আরেকটা সংযুক্ত) হতে থাকে। এ সময় একটি শিশু অনেক রিসেপটিভ হয়। অনেক তথ্য পরিবেশ থেকে গ্রহণ করতে পারে। একজন ভাল মা তাকে যদি ভাল কিছু শিক্ষা দেয় এবং পরিবারের অনান্য সদস্য সহ ভাল আচরণ করে তাহলে তার মস্তিষ্কের গঠন সেই ভাবেই হবে। তাতে ভাল কিছু গ্রহণ করবে। সে মেধাবী হবে, সফল হবে, সঠিক ভাবে সব কিছু করতে শিখবে এবং সঠিক সিদ্ধান্ত নিতেও সে পারদর্শী হবে। এছাড়াও সে শারীরিক, মানসিক ভাবে শক্ত হবে। সে যখন বড় হবে তখন সেগুলো ভাল প্রভাব তার উপর বিস্তার করবে।

আরেকটি গবেষণায় দেখা যায় যে, ২০১২ সালে ৩-৬ বছরের ৯২ জন বাচ্চার মস্তিষ্কের MRI করে দেখা গিয়েছে, যে সব বাচ্চাদের Highly Maternal Support থাকে তাদের মস্তিষ্কের Hippocampus Area টি Low Maternal Support এর চেয়ে ১০ গুণ বড় থাকে অর্থাৎ Highly Developed থাকে। এই Hippocampus Area লার্নিং, মেমোরি এবং স্ট্রেস রেসপন্সে খুব ভাল কাজ করে।

একটা বাচ্চার জন্য সার্বক্ষণিক তার মাকে দরকার তার পরিবারকে দরকার। বাচ্চা যা শিখার শিখবে। আসলে মা বাবা তাদের সমস্ত জীবনটাই ইসলামের উপর থাকবে এবং বাচ্চাদেরকে ইসলামের উপর তৈরী করবে, আল্লাহ যে সমস্ত দায়িত্ব কর্তব্য দিয়ে দিয়েছেন সেগুলো পালন করবে। মায়ের সমস্ত সময়টাই নিজের সহ নানাভাবে সবার জন্য থাকতে হবে।

সূত্রঃ

https://www.livescience.com/18196-maternal-support-child-brain.html

https://www.firstthingsfirst.org/early-childhood-matters/brain-development/

https://developingchild.harvard.edu/resources/5-steps-for-brain-building-serve-and-return/

– নায়লা নুযহাত

Scroll to Top